
প্রতিবেদক- আমিনুল ইসলাম, সৌদি আরব ঘুরে।
প্রতিদিন সূর্য ওঠে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে একদল নিঃশব্দ যোদ্ধা বাংলাদেশি সৌদি প্রবাসী শ্রমিক।তাদের দিন শুরু হয় রোদের তাপে, শেষ হয় একাকীত্বের অন্ধকারে।
কোনও বিলাসিতা নেই, নেই নিশ্চিন্ত জীবন আছে শুধু পরিবারকে টিকিয়ে রাখার অবিরাম যুদ্ধ।

সৌদি আরবে লাখো বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন এমনসব স্থানে, যেখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির বেশি।
কংক্রিট, মরুভূমি আর মেশিনের শব্দের মধ্যে দিন কাটে তাদের।
তারা কাজ করেন ঘাম ঝরিয়ে, রক্ত ঝরিয়ে, কিন্তু মাস শেষে পান একটুকরো বেতন যেটা অনেক সময় সময়মতো আসে না।
কেউ কেউ বলেন, আমরা মানুষের মতো কাজ করি, কিন্তু আচরণ পাই যেন দাসের মতো।
যেখানে রাতে ফিরেন, সেই ‘বাসা’ নামের কক্ষগুলো আসলে ঘুমানোর খাঁচা।
আট-দশজন মিলে ছোট ঘরে থাকতে হয়; ঘামের গন্ধ, গরম বাতাস, আর অবিরাম ক্লান্তি—এই নিয়েই জীবন চলে।
অসুস্থ হলে অনেকের চিকিৎসা পাওয়া দুরূহ।
কারও পাসপোর্ট জিম্মি থাকে, কেউ আবার কর্মস্থল ছেড়ে আসতে পারেন না।
তাদের জীবন যেন চুক্তিবদ্ধ শোষণের নামান্তর।
বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে এই প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় রেমিট্যান্সে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, সৌদি প্রবাসীরা প্রতিবছর দেশকে পাঠান বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
তবুও সমাজে তাদের অবস্থান আজও ‘বিদেশে থাকা লোক’এই পরিচয়েই সীমাবদ্ধ।
তাদের কষ্ট কেউ বোঝে না, তাদের অশ্রু কেউ দেখে না।
বছরের পর বছর পরিবার থেকে দূরে থেকে তারা শুধু ফোনের ওপারে ভালোবাসা খোঁজেন।
সন্তান বড় হয়, বাবা-মা অসুস্থ হয়, কারও মৃত্যু হয় সব কিছু দেখেন ভিডিও কলে।
কাজের ফাঁকে তারা চুপচাপ বসে কাঁদেন, কিন্তু সেই কান্না কেউ শোনে না।
এই নিঃসঙ্গতা একসময় তাদের মনকে পোড়ায়, শরীরকে ভেঙে দেয়।
তাদের ঘামেই বাংলাদেশের গ্রাম-শহর চলে, পরিবারগুলো বেঁচে থাকে।
কিন্তু দেশে ফিরে তারা সম্মান পান না,কেউ জিজ্ঞেস করে না, ভাই, কেমন আছেন?
নিয়োগ সংস্থার দালাল, ভিসার প্রতারণা, ন্যায্য মজুরি না পাওয়া সব মিলিয়ে প্রবাসীরা যেন অবহেলার আর শোষণের বলির পাঁঠা।তারা জানেন, তাদের ঘামের দাম কেউ বোঝে না, তবুও থামেন না।কারণ দেশের মায়া, পরিবারের ভালোবাসা, আর উন্নত জীবনের আশাই তাদের চালিয়ে রাখে।
তারা মরুভূমিতে ঘাম ঝরিয়ে গড়ে তুলছেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত, কিন্তু সেই ভিতের নিচে তাদের স্বপ্ন ধীরে ধীরে পুড়ে যায়।সৌদি প্রবাসীরা শুধু শ্রমিক নন, তারা বাংলাদেশের নীরব নায়ক।তাদের ত্যাগের গন্ধে গড়ে উঠছে দেশের অট্টালিকা, তবুও তারা পড়ে আছেন অন্ধকারে।
যদি রাষ্ট্র ও সমাজ সত্যিই কৃতজ্ঞ হতে চায়, তবে শুধু রেমিট্যান্সের পরিসংখ্যান নয় এই মানুষগুলোর চোখের জ্বালা ও হৃদয়ের কষ্টও দেখতে শিখতে হবে।
মো.আমিনুল ইসলাম 




